ফাঁসির দাবিতে সেদিন সাকিব না — ছিলেন ক্রিকেটার আশরাফুল ও মুশফিকুর রহমান

তারা তরুণ প্রজন্ম, একাত্তর দেখেননি। কিন্তু কাদের মোল্লা, গোলাম আযম, দেলোয়ার হোসেন সাঈদীসহ সব রাজাকারদের নৃশংসতার কথা জেনেছেন ইতিহাস থেকে। সেই রাজাকারদের ফাঁসির দাবিতে ফেব্রুয়ারি ১০, ২০১৩ রোববার শাহবাগের গণজাগরণ মঞ্চে এসেছিলেন জাতীয় দলের ক্রিকেটাররা। এসেছিলেন ক্রিকেট সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাগণও। বিসিবির কর্মচারীরাও বাদ যাননি।
এই দলে অবশ্য ছিলেন না সাকিব আল হাসান, তামিম ইকবাল, মাহমুদউল্লাহ, রুবেল হোসেনসহ বেশ কয়েকজন তারকা ক্রিকেটার। কিন্তু যারা এসেছিলেন তাদের নিয়েই উৎফুল্ল ছিলেন আন্দোলনের সৈনিকরা।
ছেলে-বুড়ো সকলের দৃষ্টি ক্রিকেটারদের দিকে। এত ভিড় লেগে ছিল যে বক্তব্য দেওয়ারও সুযোগ হয়নি। এর প্রয়োজনও ছিল না। সশরীরে ক্রিকেটারদের উপস্থিতিই যথেষ্ট ছিল আন্দোলনকে প্রাণবন্ত করার জন্য।
বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড (বিসিবি) সভাপতি নাজমুল হাসান পাপনের নেতৃত্বে জাতীয় দলের ক্রিকেটার, বোর্ড পরিচালক, ক্রিকেট সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাগণ এবং ক্লাব কর্মকর্তাদের দলটি দুপুর সোয়া একটায় গণজাগরণ মঞ্চে উপস্থিত হয়। মুশফিকুর রহিম (অধিনায়ক), মাশরাফি বিন মুর্তজা, আব্দুর রাজ্জাক, মোহাম্মদ আশরাফুল, নাসির হোসেন, এনামুল হক বিজয়, সোহাগ গাজী, ইলিয়াস সানি ও মমিনুল হক এসেছিলেন শাহবাগে।
বিসিবি এডহক কমিটির সদস্য আহমেদ সাজ্জাদুল আলম ববি, জালাল ইউনুস, মাহাবুবুল আনাম, আফজালুর রহমান সিনহা, লোকমান হোসেন ভূইয়া এবং ইসমাইল হায়দার মল্লিকও ছিলেন এই দলে। আন্দোলনে শরিক হয়ে একাত্মতা প্রকাশ করেন জাতীয় দলের প্রধান নির্বাচক আকরাম খান এবং নির্বাচক হাবিবুল বাশারও। জাতীয় দলের সাবেক ক্রিকেটাররাও বাদ পড়েনি।
১৫ মিনিট শাহবাগে থেকে ক্রিকেটাররা চলে গেছেন যে যার গন্তব্যে। কিন্তু তাদের উপস্থিতির সবাইকে নাড়া দিয়ে গেছে। বিসিবি সভাপতি নাজমুল হাসান তো বজ্র কণ্ঠে স্লোগান দিলেন। তিনি যে
আবেগাপ্লুত হয়ে পড়েছিলেন সেটা প্রকাশ পেল তাঁর প্রতিক্রিয়ায়, ‘স্লোগান অনেক সময় সংগঠনের জন্য দেই, দলের জন্য দেই, নিজের জন্য দেই, এই প্রথম স্লোগান দিলাম দেশের জন্য। এই জন্য খুব ভালো লাগছে। ’
কাদের মোল্লাসহ সব রাজাকারদের ফাঁসির দাবিতে বেশ কিছুদিন ধরে দেশে গণআন্দোলন চলছে। শাহবাগে তৈরি হয়েছে গণজাগরণ মঞ্চ। এই আন্দোলনে প্রতিদিন হাজার থেকে লাখ মানুষ একাত্মতা প্রকাশ করছেন। একটু দেরিতে হলেও ক্রিকেটাররা এলেন সেই মঞ্চে।
বিসিবি সভাপতি বলছিলেন, ‘এখানে সব ক্রিকেটার আসতে পারেনি। কিন্তু সবাই এই আন্দোলনের সমর্থক। এতদিন আসা হয়নি বিপিএলের খেলা থাকায়। আমরা এখানে এসে সবাইকে জানিয়ে দিলাম আমরাও আছি তাদের সঙ্গে। ’
‘আমাদের এই তরুণ প্রজন্ম যারা মুক্তিযুদ্ধ দেখেনি। তারা দেশের মুক্তির জন্য যে আন্দোলন গড়ে তুলেছে তা অবিশ্বাস্য। তাদের যে দেশপ্রেম সেটা দেখে সরাদেশ অভিভূত। তাদের যে ন্যায্য দাবি কাদের মোল্লাসহ সব রাজাকারের ফাঁসি তার সঙ্গে আমরাও আছি। সাথে সাথে এটাও বলতে চাই, এই বাংলায় রাজাকারদের ঠাঁই নাই। এই চিন্তাধারার সঙ্গে আমরাও আছি’- বলেন নাজমুল হাসান।
ক্রিকেটার আশরাফুল গণজাগরণ মঞ্চে এসে অভিভূত, ‘খুবই ভালো লেগেছে। খেলা না থাকলে আরও আগে আসতাম। এটা গণমানুষের আন্দোলন। আমি মনে করি সবারই এখানে আসা উচিৎ। ’
এর আগে সকালে গণজাগরণ মঞ্চে এসেছিলেন বিপিএলের দল দুরন্ত রাজশাহীর ক্রিকেটাররা। ফ্র্যাঞ্চাইজি মুশফিকুর রহমান মোহনের নেতৃত্বে ক্রিকেটার জিয়াউর রহমান, তাইজুল ইসলাম, নাঈম ইসলাম জুনিয়র, ফরহাদ হোসেন ও কোচ হান্নান সরকার শাহবাগে একাত্মতা প্রকাশ করেন।
Comments
Post a Comment